Blogs Post

বাংলাদেশ কি কি ফুলের মধু পাওয়া যায় এবং এটির বৈশিষ্ট্য কি?

রাসূলুল্লাহ (সা.) মধুকে ‘খাইরুদ্দাওয়া’ বা মহৌষধ বলেছেন। আয়ুর্বেদ এবং ইউনানি চিকিৎসা শাস্ত্রেও মধুকে বলা হয় মহৌষধ। প্রাচীনকাল থেকেই পারিবারিকভাবে ‘পুষ্টিকর ও শক্তিবর্ধক’ পানীয় হিসেবে সব দেশের সব পর্যায়ের মানুষ অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে ব্যবহার করে আসছে। 

ভিন্ন ভিন্ন মধু স্বাদ ও গন্ধে আলাদা। আমাদের দেশে অনেক ধরনের মধু প্রাকৃতিক এবং চাষের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।  প্রাকৃতিক মধু সবচেয়ে বেশি সংগ্রহ করা হয় সুন্দরবন থেকে।  চলুন আজ বাংলাদেশ প্রচলিত কিছু মধু এবং তার বৈশিষ্ট্য ও সংগ্রহের সময়কাল সম্পর্কে জানা যাক। 

চলুন এবার জেনে আসা যাক বাংলাদেশের কোন ফুলের মধুর স্বাদ এবং বৈশিষ্ট্য কি?

👉লিচু ফুলের মধুঃ দেখতে সাধারণত Light Amber রঙের হয় (তবে সময়, স্থান ও ঘন-পাতলার উপর নির্ভর করে কিছুটা Light বা Dark হতে পারে)। খেতে খুবই সুস্বাদু। মধু খাওয়ার সময় অবশ্যই মধুতে লিচু ফলের স্বাদ পাওয়া যায়। ঘ্রাণ টাও লিচু ফলের সাথে মিলে যায়।মধুর ঘনত্ব কম বা বেশি হতে পারে এটি নির্ভর করে মধু সংগ্রহের সময়ের উপর।তবে মধু পাতলা হলে ফেনা হতে দেখা যায়। আর ঘনত্ব বেশি হলে ফেনা হতে দেখা যায় না।সাধারণত লিচু ফুলের খাটি মধু সামান্য জমতে দেখা যায়। যদি মধু পাতলা হয় তাহলে সেটা কয়েকমাস পরে সামান্য জমতে পারে। আর যদি মধু খুবই ঘন হয় তাহলে সেটা দ্রুত জমতে শুরু করে এবং সম্পূর্ণ মধুই জমে যেতে পারে বা বেশীরভাগ জমতে পারে।

👉কালোজিরা ফুলের মধুঃ এই মধুদেখতে কিছুটা কালচে রঙের হয়।খেতে একেবারে খেজুরের গুড়ের মত স্বাদ লাগে এবং ঘ্রাণ টাও খেজুরের গুড়ের সাথে মিলে যায়। মধুর ঘনত্ব কম বা বেশি হতে পারে,মধু পাতলা হলে ফেনা হতে দেখা যায়। আর ঘনত্ব বেশি হলে ফেনা হতে দেখা যায় না। সাধারণত কালোজিরা ফুলের খাটি মধু জমে না । তবে ধনিয়া ফুল সহ অন্যান্য ফুলের মধুর মিশ্রনের ফলে অনেক সময় সামান্য জমতে পারে।

👉ধনিয়া ফুলের মধুঃ বাংলাদেশে ধনিয়া ফুলের মধু খুব বেশী পরিচিত নয়। অথচ এই মধুর উৎপাদন যে একদম কম তাও নয়। এই মধু মিষ্টি এবং হালকা মশলার স্বাদ যুক্ত। রঙ হবে গাঢ় খয়েরী ও লালের মিশ্রণ। এই মধু আমাদের কাছে কম পরিচিত হওয়ার একটা বড় কারণ হল — এই মধুকে অসাধু ব্যবসায়ীরা কালোজিরা ফুলের মধু বলে চালিয়ে দেয়। ধনিয়া ফুলের মধুুও শীতকালে জমে যেতে পারে। আর গরমের সময় জমতে একটু দেরী হয়, কয়েক সপ্তাহ বা ২/৩ মাস বা এর চেয়ে একটু বেশী সময় লেগে যেতে পারে। বোতলে রাখা ধনিয়া ফুলের মধুর বেশীর ভাগ অংশ বা আংশিক জমে যেতে পারে।ধনিয়া ফুলের মধুও জমে অনেকটা ঘি-এর রূপ ধারণ করে। জমে যাওয়া মধু মোলায়েম, নরম এবং একটু বড় দানার হবে।

👉সরিষা ফুলের মধুঃ এই মধুর ঘ্রাণ একটু তীব্র হয়, মুখে দিলেই সরিষা ফুলের ঘ্রাণ আসে, হালকা সাদাটে সোনালি রং হয় এই মধু। সরিষা ফুলের মধু শীতে সম্পূর্ণভাবে জমে ক্রিম হয়ে যাবে যদি সেটি RAW হয়।এটির এই মধুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য।  

👉বরই ফুলের মধুঃ এই মধু সাধারণত গাঢ় অ্যাম্বার বা লালচে রঙ হয়, দেখতে স্বচ্ছ এবং চকচকে।আর এতে কিছুটা পাকা বরইয়ের স্বাদ পাওয়া যায়। অনেকেই বলে হালকা টক টক ভাব আছে। বরই মধুকে রেড হানি, জুজুবি হানি, সিদর হানি (Natural Sidr / Jujube Honey) ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। এটি জমে যাওয়া সহজ নয়, তবে রেফ্রিজারেটরে বা তাপমাত্রা ১২-১৪ ডিগ্রির নিচে স্ফটিক হয়ে যাবে। ঝাঁকুনি দিলে ফেনা হবে।

👉প্রকৃতিক মৌচাকের মিশ্র ফুলের মধুঃ সাধারণত গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন গাছ,ঘরের কোনা এসব জায়গাতে প্রকৃতিক ভাবে মৌমাছি বাসা তৈরি করে এই মধু সংগ্রহ করে।একক ভাবে এই মধুর কোন স্বাদ এবং ঘ্রাণ নেই। সিজন ভেদে এই মধু কখনো  light Amber আবার কখনো Drake হয়ে থাকে এবং স্বাদও সিজন অনুযায়ী হয়ে থাকে । তবে অনেক কাছেই এই মধুর চাহিদা অনেক। এই মধু সবার থেকে কিছুটা আলাদা প্রকৃতির হয়ে থাকে ঘ্রান সিজনবেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। তবে চাকের মধু বেশির ভাগ সময় পাতলা হয় পাতলা মধুতে ফেনা হতে পারে শীতের সিজনের মধু জমবে। মার্চের পরের মধু গুলা জমতে খুব কম দেখা যায়।

👉সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মধুঃ সুন্দরবনের মধু কিছুটা হালকা হয়ে থাকে কিন্তু খুবই সুস্বাদু টকটক মিষ্টি।সুন্দরবনের মধু ফ্রিজে রাখলেও কখনো জমাট বাধেঁ না কিন্তু অন্য মধুর জমাট বাঁধা টা স্বাবাবিক ব্যাপার। সুন্দরবনের মধুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- একটু ঝাঁকি লাগলেই প্রচুর পরিমাণে ফেনা হয়ে যাবে কিন্তু অন্য মধুতে এত ফেনা হয় না। তবে সুন্দরবনে বিভিন্ন ধরনের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়ে থাকে এটি ঐ অঞ্চলের উক্ত ফুলের আধিক্য এর কারনে এর স্বাদ ও ঘ্রাণ পরিবর্তন হয়ে থাকে। 

  • খলিশা ফুলের মধু

দেখতে সাদা এ ফুলের মধু অপেক্ষাকৃত অন্য মধু থেকে গাঢ় ও কড়া মিষ্টি। সাধারণত ফাল্গুন মাসে এ ফুলের মধুর সিজন শুরু হয়। যত দিন যায়, তত এ মধুর প্রাকৃতিকভাবে তার রঙ পরিবর্তন করে লালচে হতে থাকে। 

  • গড়ান ফুলের মধু

খলিশা মধুর পরই আসে গড়ান মধু। গুণগত মানে গড়ান মধু খলিশার প্রায় সমান। স্বাদ ও ঘ্রাণ একই রকম। তবে গড়ান মধুর কালার একটু লালচে হয়। সময়ের সাথে তা বাড়তে থাকে। 

  • পশুর ফুলের মধু

গড়ান মধুর সঙ্গে পশুর ফুলের মধুর সম্পর্ক প্রায় কাছাকাছি। খলিশা থেকে পশুর মধু একটু কম গাঢ় ও মিষ্টি হয়ে থাকে। এ মধু হালকা লালচে ধরনের। অনেকটা সরিষার তেলের মতো রঙ। সাধারণত চৈত্র মাসে এ ফুলের মধুর সিজন শুরু হয়ে থাকে।

  • কেওড়া ফুলের মধু

মধু মানেই মিষ্টি। তবে কেওড়া মধু একটু টক-মিষ্টি। এ মধু দেখতে সাদা রঙের হয়ে থাকে। সাধারণত জৈষ্ঠ্য মাসে এ ফুলের মধুর সিজন শুরু হয়। দামেও একটু কম। 

  • বাইন ফুলের মধু

বাইন মধু সহনীয় মিষ্টি। খলিশা বা পশুর মধুর মতো অতো কড়া না। দেখতে পশুর মধু থেকে একটু হালকা রঙ ও পাতলা হয়ে থাকে। সাধারণত আষাঢ় মাসে এ ফুলের মধুর সিজন শুরু হয়। এ মধু খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। 

  • গেওয়া ফুলের মধু

এ মধু দেখতে পুরোপুরি গড়ান মধুর মত লালচে ধরনের। তবে ঘ্রাণ একদম আলাদা এবং স্বাদ হালকা তেতো টাইপের। তবে অনেকেই এ মধুর স্বাদ পছন্দ করেন। গেওয়া মধুর ঘ্রাণের মাঝে এক ধরনের মাদকতা পাওয়া যায়। এ মধু মেয়েদের রূপচর্চার জন্য সবচেয়ে ভালো।

এছাড়াও ছৈলা, ওড়া, হরগোজা, হেঁতাল, গোলপাতা, খামু, লতা সুন্দরী, ধুন্দুল, আমুর, কাঁকরা, সিংরা, ঝানাসহ আরো অনেক গাছের ফুল থেকেই মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে থাকে।

এবার চলুন যেনে আসা যাক কোন ফুলের মধু সংগ্রহের সময় কখনঃ-

  • সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহের সময় – ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস
  • ধনিয়া ফুলের মধু সংগ্রহের সময় – ফেব্রুয়ারি মাস
  • কালোজিরা ফুলের মধু সংগ্রহের সময় – ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাস
  • লিচু ফুলের মধু সংগ্রহের সময় – মার্চ ও এপ্রিল মাস
  • সুন্দরবনের মধু সংগ্রহের সময় – এপ্রিল ও মে মাস
  • বরই ফুলের মধু সংগ্রহের সময় – অক্টোবর মাস

অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য। খাঁটি মধু পেতে এখনি আমাদের ওয়েবসাইটি ভিজিট করুন অথবা আমাদের ফেজবুক পেজে ম্যাসেজ করুন 

– – – ধন্যবাদ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *